বনানীতে দু্ই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ সঠিক বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে ধর্ষণের শিকার এক তরুণীর কাছ থেকে সেই রাতের ঘটনার বিস্তারিত শুনেছেন তারা। তরুণীর জবানিতে বিস্তারিত শুনে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন, সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দুই তরুণী ধর্ষিত হয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, অপরাধ বিভাগ ও উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ দলের একাধিক কর্মকর্তা বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ সময় মামলার বাদী ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন এমন দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, মামলার বাদী যেসব বক্তব্য দিয়েছেন এবং তারা জিজ্ঞাসাবাদ করে যা জানতে পেরেছেন, এতে তাদের কাছে ঘটনাটি সত্য বলেই মনে হয়েছে। তাদের মধ্যে পূর্বাপর সম্পর্ক এবং ওই রাতের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন তারা। কোন পরিস্থিতিতে ও কিভাবে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে তার খুঁটিনাটি সব তথ্যই নেওয়া হয়েছে। এই অপরাধ কর্মকাণ্ডের প্রমাণ ও আলামত জোগাড়ের জন্য তারা আরও নিবিড় তদন্ত করবেন। হোটেল কর্মকর্তা, কর্মচারী ছাড়াও আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসা হবে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে একাধিক কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। পরে একে একে নির্যাতনের সব চিত্র তুলে ধরেন তাদের সামনে। সাফাতের নির্যাতনের কাহিনী বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তরুণী। ওই রাতে ধারণ করা ভিডিও’র ভয় দেখিয়ে কিভাবে সাফাতের সহযোগীরা পরবর্তীতে আরও ব্ল্যাকমেইল করতে চেয়েছিল, তাও বলেছেন। দীর্ঘমেয়াদী নির্যাতনের ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে দেরিতে হলেও তারা আইনগত সুরক্ষার জন্য মামলা করেছেন। এতে তৃতীয় পক্ষের কোনও উস্কানি ছিল না বলেও ওই তরুণী জানিয়েছেন।

কিভাবে ও কার মাধ্যমে আসামিদের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়েছিল এবং ধর্ষণের আগে ভয়ভীতি দেখিয়ে, নাকি প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছিল সেগুলোও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারিহা মাহবুব পিয়াসার সঙ্গে কিভাবে তরুণীদের পরিচয় হয়েছিল এবং সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার আগে অন্য কোনও অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন কিনা তাও জানতে চেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আয়শা সিদ্দিকা মিলি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার সঠিক তদন্তের জন্যই মামলার বাদী ও ধর্ষণের শিকার তরুণীকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তদন্তের পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন তারা।’

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) শেখ মো. নাজমুল আলমের কক্ষে মামলার বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বেশ কয়েজন কর্মকতা উপস্থিত ছিলেন। উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেখ নাজমুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুনেছি। বাদীর মৌখিক বর্ণনার সঙ্গে মামলার অভিযোগের মিলও পাওয়া গেছে। এখন আমাদের মূল কাজ হচ্ছে আসামিকে গ্রেফতার করা। তাদের গ্রেফতার করা গেলে ঘটনার সব রহস্য বেরিয়ে আসবে।’

প্রসঙ্গত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওই দুই শিক্ষার্থীকে জন্মদিনের দাওয়াত দেয়। এরপর তরুণীদের বনানীর কে-ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে নিয়ে যায়। এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, সেখানে জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলাকালীন দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করে সাফাত ও নাঈম। ধর্ষণ মামলার আসামিরা হলো- সাফাত আহমদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।